Wednesday, September 3, 2008

ঃঃঃঃঃ মানুষের বিবর্তন এবং সামাজিকতা ঃঃঃঃঃঃ

কয়েকদিন আগের কথা। রাত ১১টার মতো বাজে। আমি রিক্সাকরে বাড়ি ফিরছিলাম। সোনারগাঁ সিগন্যালের মোড়ে দেখলাম ঢাকার বাইরে থেকে খাদ্য বাহী পিক-আপ ভ্যান গুলো কাওরান বাজারে ঢুকছিলো। মোড় ঘোড়ানোর জন্যে স্লো করে। টোকাইদের একটা দল। বয়স সবার গড়ে ১০-১২ হবে। একজন লাফ দিয়ে চলন্ত পিক-আপের পিছে উঠে গেল। তার পরে বস্তার মুখ খুলে খাবার দাবার ফেলে দিল চোখের নিমিষেই, ফুটপাথে থাকা তার গ্যাং এর বাকীরা কুড়িয়ে নিয়ে দৌড়। ড্রাইভার থামানোর আগেই ছেলেটাও দৌরে হাওয়া হয়ে গেল। আমি মিলিটারি একাডেমি থেকে সামরিক ট্রেনিং নেয়া। ১০ বছরের ছেলেটা যেভাবে লাফিয়ে চলন্ত ট্রাকে উঠলো আমি হতবম্ভ হলাম। চালের দাম আক্রা। খাবার না পেলে সব প্রানী খাবার কেড়ে নেবে এবং দরকার মতো অভিযোজিত হবে।

এইচ জি ওয়েলসের “টাইম মেশিন” বইটা সায়েন্স ফিকশান জগতে একটা বিরাট কাজ। টাইম মেশিন নিয়ে পড়ে অনেক ভালো ভালো কাজ হয়েছে যতদুর জানি এটা প্রথম কাজ। তবে আজ পর্যন্ত কাউকে বলতে শুনি নাই যে ওয়েলসের টাইম মেশিন তার প্রিয় বই। কেন? আমার যা মনে হয়েছে বইটাতে ভবিষ্যতের মানব সম্প্রদায়ের করুন পরিণতি দেখানোর জন্যে। সবাই সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখি, টাইম মেশিন সিনেমার ক্ষেত্রেও তাই। ভবিষ্যতে মানুষের বিবর্তন হবে, দুই প্রজাতির মানুষ তৈরি হবে, একদল মাটির উপরে সুন্দর জীবনযাপন করবে, আর দল মাটির নিচে বর্বর পশুদের জীবনে থাকবে। সুযোগ পেলেই ওদের ধরে খেয়ে ফেলবে। ব্যাপারটা কষ্টের।

ওখানের যা বলেছে ভবিষ্যতের ধনি মানুষেরা জগতের সব সুবিধা পাবে। ওরা পৃথিবীর সুন্দর সুন্দর জায়গা গুলোতে বসত গারবে। ভালো খাবার খাবে, ভালো শিক্ষা, ভালো চিকিতসা ভালো সব কিছুই তাদের দখলে। আর গরীবের দল থাকবে, সাবওয়েতে, ফুটপাথে, ফেলে দেয়া খাবার খাবে, শিক্ষা চিকিতসা ছাড়া বাঁচতে শিখবে। এবং মানুষের ধর্ম যখন কিছুই পাবে না তখন কেড়ে নিতে শিখবে।

মুল প্রসঙ্গে যাবার আগে আরেকটু সায়েন্সের বাগড়াম্বর করি। অনেক আগে এরকম একটা ফিচার পড়ছিলাম কোন জানি ম্যাগাজিনএ। পাশ্চাত্যের লোকজনেরা টেকনোলজি ব্যাবহারে এগিয়ে যাচ্ছে। আর অনুন্নত দেশগুলো পিছিয়ে আছে কয়েক শতাব্দি। এর সামাজিক প্রভাবটা দেখা যাচ্ছে, প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যে। ওরা ভাবে অন্যভাবে, ভালোবাসে অন্যভাবে, খাদ্যাভ্যাস চিন্তা করাও আলাদা। আমরা বলি আমেরিকানরা লুইচ্চা, ইন্ডিয়ানরা কিপটা, ইজরায়েলীরা হার কঞ্জুষ, ব্রিটিশরা গম্ভির, ফরাসীরা উচ্ছৃঙ্খল যৌনতা, আর আইরিশরা লোভী, ইথিওপিয়ার অভুক্ত শিশুদের নিয়ে ফানি কার্টুন দেখার দুর্ভাগ্য আশা করি আমার একার হয়নি। ওই পত্রিকাটা বলেছিল, হয়তো এর ইফেক্ট মানব বিবর্তনে প্রভাব ফেলবে (না ফেলার কারণ দেখি না)। যখন সাগরে খাবার প্রাচুর্যতা কমে গেল আর স্থলে বাড়লো সাগরের প্রানীরা বিবর্তনের মাধ্যমে স্থল চর হলো। মিউজিয়ামে গিয়ে আগেরকালের ঢাল তলোয়ার গুলো দেখলে অবাক হতে হয় এরকম ভয়ঙ্কর হেলমেট আর বর্ম পড়ে ওরা ভিষন দর্শন গদা নিয়ে কিভাবে ফাইট করতো। বিজ্ঞানীরা বলছে মানুষের আকৃতি ছোট হচ্ছে, কানের লতি, এপেনডিক্সের মতো অপ্রয়োজনীয় অংগ নাকি ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। বায়োলজীতে আমার জ্ঞ্যান খুব কম তাই শিওর বলতে পারছিনা এরা ঠিক কি না। কিন্ত ডারউইনের বিবর্তনবাদ সঠিক হলে মানুষের বিবর্তন না হবার কারণ নাই, আর এই চাওয়া না পাওয়াগুলো এর কারণ হতে বাধ্য। হোমো স্যাপিয়েন্স থেকে জন্ম নেবে নতুন প্রজাতি হোমো সুপেরিয়র। যেই শিশুটা বস্তিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, শিক্ষা চিকিতসা ছাড়া জন্ম নিয়ে বড় হয়, অখাদ্য কুখাদ্য খেয়ে বড় হয়, এবং খুব বেশি প্রতিভভাবান না হলে তার ছেলে এবং তার ছেলেও একই রকম সুযোগ পায়, তার নাতি আর সমাজের উচ্চস্তরের এক ব্যাবসায়ীর নাতির চেহারা, শারিরিক ক্ষমতা, মেন্টালিটি সব আলাদা হতে বাধ্য। সৌদি রাজবংশের সবাই মোটা মুটি দেখতে একই রকম, ফর্সা, তেল তেলে চর্বি আর ভুড়িওয়ালা। আমেরিকানরা সবাইকেই দেখি বিশাল লম্বা চওরা। আর আফ্রিকা বা এশিয়ার মোটামুটি বেশিরভাগ লোক দুর্বল শারিরিক গঠনের হয় অথবা হচ্ছে।

রোজার মাস। সবাই বাড়িতে হালিম, ছোলা বুট খাচ্ছি, সবাই অবশ্য না। যারা খেতে পাড়ছে না, তাদের সামাজিকতায় আর মানষিকতায় পরিবর্তন আসছে। এরা কম্পিউটার দেখেনি, ব্লগিং কখোনোই করবে না। এরা কম্পিউটার ভাইরাসের কিংবা স্প্যাম মেইল নিয়ে ভাববে না, আর আরেকদল জন্মানোর পর থেকেই জানবে ইলেক্ট্রিসিটি, বাবা মা কে লুকিয়ে কিভাবে কোন চ্যানেলে এডাল্ট শো হয় এরা জানে, চ্যাট করে টিনেজ লাইফ কাটাবে, এরা আরেকদলে।এই পরিবর্তন হয়তো প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বয়ে যাবে। এবং কেড়ে খেতে হবে খাবার না পেলে। তাও না পেলে শিকার করতে হবে। ঈশ্বর ওয়েলসের টাইম মেশিন যেন কখোনো সত্য না হয়।

সুপার হিউম্যানদের নিয়ে অনেক লিখাই পাওয়া যায় নেটে, কেউ ইন্টারেস্টেড থাকলে পড়তে পারেন।
http://en.wikipedia.org/wiki/Superhuman

No comments: