Saturday, August 30, 2008

ঃঃঃঃঃঃ মধ্যরাতের বৃষ্টী ভেজা আর তেহারী খাবার গল্প ঃঃঃঃঃঃঃ

ঃঃঃঃঃঃ মধ্যরাতের বৃষ্টী ভেজা আর তেহারী খাবার গল্প ঃঃঃঃঃঃঃ

কাল রাতে তুমুল বৃষ্টি হলো,
আমি গিয়েছিলাম তেহারী ঘরে, সোবাহানবাগে। আমার খুব প্রিয় একটা খাবার জায়গা। হাজীর বিরিয়ানীতে তেল থাকে বেশি, স্বাদে সময় অসময় বায়নাক্কা থাকে বেশি, আর ফকরুদ্দীনের বিরিয়ানী আমার কাছে কেমন যেন পানসে পানসে লাগে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো। এখন আমাকে আর কিছু বলতে হয়না। খালি একটা চেয়ার দেখে বসে পড়ি। অপেক্ষা করতে হয়না, (মাঝে কিছু দিন অনেক চিল্লা চিল্লি করেছিলাম, তার ফল) চলে আসে প্রথমে হাফ প্লেট তেহারী, কাঁচা পেয়াজ ফালি ফালি করে কাটা আর দু গ্লাস ঠান্ডা পানি। আমি কখোনোই ওখানকার সালাদ খাই না। কেমন যেন গন্ধ লাগে, আর ক্ষীরা টা জ্বালা থাকে। তাই সালাদ দেয়েই না। এর পরে হাফ শেষ না হতে হতে আরেক হাফ চলে আসে, সেটা শেষ করে হাত মুখ ধুয়ে বসতে না বসতেই চলে আসে এক গ্লাস কোকাকোলা।

নিঃসন্দেহে ঢাকার বেষ্ট তেহারী বানায় মোহাম্মদপুর বিহারী ক্যাম্পের ভেতরে। কিন্ত হাইজেনিক ইস্যুর কারনে ওখানে লোক যায় খুব কম। ওখানে তেহারী দেয় টিনের প্লেটে আর পানি খাবার সিস্টেম আরো ভয়ানক। সামনে গলির মুখে গ্লাস নিয়ে টিউবওয়েল চেপে খেতে হয়। কিন্ত তেহারী হয় অসাধারণ বেহেস্তি। বেশিরভাগ মানুষেরই পেটে এ জিনিস সহ্য হয় না। কিন্ত আমার পেট হয়তো অমানুষ কিংবা অতি মানুষের।

তেহারী খেয়ে একটা রিক্সা নিলাম। রাত ১১টার মত বাজে। রাপা প্লাজার সামনে ভয়ঙ্ক্র জ্যাম। রিক্সা ওয়ালা নজরুল ভবনের ওদিক দিয়ে চান্সে রিক্সা ঢুকিয়ে দিল, সাতাশ নাম্বার দিয়ে বের হলাম। টিপ টিপ করে বৃষ্টী পড়ছিল, ধানমন্ডি লেকের পাশে জোরে নামলো। পথে লোকজন কমে গিয়েছিল, বৃষ্টী ঝেটিয়ে সবাইকে সরিয়ে দিল, আমার রিক্সাওয়ালা আমাকে পলিথিন সাধলো। আমি নিলাম না। শঙ্করের মাথায় খুব চমতকার একটা দৃশ্য দেখলাম। মোবাইল ফ্যামিলি, বাবা একটা ভ্যান গাড়ি টানছে, আর পিছে গমভির মুখে মা বসে আছে, পাশে তিনটে ছোট ছোট বাচ্চা। বাচ্চাগুলো কোন কারণে খুব মজা পাচ্ছিল, সবচে ছোটটা অকারণ হাসিতে কুটি কুটি। বাকি গুলো একটু পর পর ছোটর সাথে যোগ দিচ্ছিল। হয়তো মাঝরাতের অঝোর বর্ষন ওদের হাসির কারণ। মা একটু পর পর ওদের দিকে চোখ রাঙ্গানী দিচ্ছে, বড় দুটো লাল চোখ দেখে চুপ করে গেলেও সবচে ছোটটা পাত্তাই দিচ্ছে না। সে ক্রমাগত হেসে কুটি কুটি।

শঙ্কর পার হয়ে লালমাটিয়া RABঅফিসের সামনে আসতেই আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামলো, রিক্সার হুড তুলে দিলাম, কিন্ত রিক্সাওয়ালার কাছে পলিথিন ছিল না। ভিজে একশেষ। আমার গায়ে টেক্সটমার্টের কর্পোরেট শার্ট। এই ড্রেস পরে মিটিং করা যায়, কিন্ত শ্রাবনের ঝুম বৃষ্টিতে ভেজা...ঠিক মানায় না। ভিজতে অনেক মজা লাগলো, মনে হচ্ছিলো আকাশ যেন ফুটো হয়ে গেছে। পৃথিবী ভাসিয়ে নেবে যেন। মোহাম্মদপুর ট্রাক স্ট্যান্ডের সামনে একজন বাবা মোটর সাইকেল থামিয়ে মসজিদের গেটের নিচে ঢোকার চেষ্টা করছে, সাথে দুই পিচ্চি, মেয়েটা ৭/৮ বছরের হবে, আর ছেলেটা বছর পাঁচেকের, অপু আর দুর্গার ঢাকা এডিশান যেন, বাধ্য হয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে হচ্ছে, ভেজার জন্যে কারো বকা খেতে হবে না, তাদের মজা দেখে কে। বাবা ভদ্রলোক কিছুক্ষন হতবম্ভের মত তাকিয়ে থাকলেন। বৃষ্টি যে এত ভয়াবহ ভাবে নামবে বেচারা বুঝতে পারেনি। দুই দুষ্টু কে নিয়ে কিছুক্ষন হতবম্ভ হয়ে থাকলেন। বাচ্চাদের মজা দেখে একটু পরেই পশ্রয়ের হাসি হাসলেন, অবিকল বিভুতিভুষনের হরিহর মুখুজ্যের মত।

পুরো ঢাকা শহরের মলিনতা মুছে দিতে যেন তুমুল বৃষ্টি নামলো। সাথে ঢাকের তালের মতো বাজ পড়া, ঠিক ঝর বলা যায়না, শ্রাবন মাসে কি ঝর হয়, বৃষ্টির দিন। তাজমহল রোড আসতে আসতে আমি ভিজে কাঁই হয়ে গেলাম। ভালো লাগলো অনেক, মনের আদ্রতা তবুও থেকে গেল কিছুটা, কেন? সে আরেকগল্প বলা যাবে আরেকদিন। অন্যকোনো রাতে বৃষ্টিতে ভেজার পর।



পরশু রাত (২৮/০৮/০৮) বৃষ্টি শুরু হলো রাত ১১টার একটু পরে, মুশুলধারে বৃষ্টি, রাত তিনটা পর্যন্ত চলে, লেখা টা পরের দিন রাতে লিখা, এখন, নেট লাইন পাচ্ছিনা, কেন কে জানে, কালকে যদি সময় পাই আর নেট ঠিক থাকে, পোস্ট করে দেব।

No comments: