ঃঃঃঃ মানুষ আমি আমার কেন পাখির মত মন, তাইরে নাইরে নাইরে ঃঃঃঃ
অনেক দিন আগে একটা বই পড়েছিলাম। দি বার্ডম্যান। রাইটার নাম ধাম কিছু মনে নাই। সায়েন্স ফিকশান। সায়েন্সের পরিমান প্রয়োজনের চেয়েও অনেক অনেক কম আর ফিকশান ভর্তি। একজন ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি ইলেক্ট্রিসিটির কাজ করছিল। ভুলক্রমে তার শরীরের ভেতর দিয়ে হাই ভোল্টেজের কারেন্ট চলে যায়। ভদ্রলোক কয়েকদিন হসপিটালে থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসে। কেউ টের পায়নাই এর ফলে তার ডিএনএতে কঠিন মিউটেশান হয়ে গেছে। যাই হোক বাড়ি ফিরেই সে তার বউএর সাথে মিলিত হয় এবং তার বউ গর্ভবতী হয়। যথাসময়ে তাদের একটা ফুটফুটে ছেলে বাচ্চা হলো। অনিন্দ্য সুন্দর একটা বাচ্চা, একটাই খুত তার ডিএনএ তে বারাবারি রকম মিউটেশানের ফলে সে জন্ম নেয় একজোড়া ডানা নিয়ে। স্বাভাবিক মানুষের তুলনায় তার হাড় অনেক বেশি পাতলা এবং হালকা, শরীর স্তন্যপায়ীদের চেয়ে উষ্ণ। বিজ্ঞানীরা বাচ্চাটাকে আলাদা করে রাখে। একটা নির্জন দ্বীপে একজন বিজ্ঞানীতাকে নিজের ছেলের মত আদর যত্ন বড় করতে থাকে (অনেকটা বেলায়েভ এর এম্ফিবিয়ান ম্যান এর মত)। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার একটা বাজে স্বভাব হলো মাঝে মাঝেই সে ডানা মেলে উড়াল দিত, সাগর পাড়ি দিয়ে মেইনল্যান্ডে চলে আসতো। শহরের পত্রপত্রিকায় অতিকায় একপাখির কথা ফলাও করে প্রচার হতে থাকে। এই সময় মেইনল্যান্ডের একরুপসীর প্রেমে পড়ে বার্ডম্যান। পড়ে পালক বৈজ্ঞানীক বাবার সহায়তায় অপরেশন করে ডানা কেটে ফেলে দেয়। স্বাভাবিক মানুষ হিসাবে বিয়ে করে সুখে ঘর সংসার শুরু করে দেয়। কিছুদিন পরে তার স্ত্রী গর্ভবতী হয়। সে বার বার ভয় পাচ্ছিলো তার ছেলেও কি ডানা নিয়ে জন্ম হবে। কিন্তু বাস্তবে এমন হলোনা। একটা সুস্থ স্বাভাবিক সন্তানের জন্ম হল। তার বৈজ্ঞানিক পালক বাবা হাইপো থিসিস দিল প্রকৃতির একটা ভুলের ফলে অস্বাভাবিকতা নিয়ে বার্ডম্যানের জন্ম। একই ভুল প্রকৃতি দ্বিতিয়বার করবে না।
সব ঠিকঠাক চলছিল। সুন্দরী স্ত্রী, সুস্থ সবল একটা ছেলে। বার্ডম্যান একদিন অবাক হয়ে দেখলো তার পিঠের কাছটা থেকে আবার ডানা গজাচ্ছে। এই ডানাটা আগেরটার মত সবল না, অনেক দুর্বল। তার পালক বাবা ছাড়া আর সবার কাছে ব্যাপারটা গোপন রাখলো সে। পালক বাবা বললো আরেকটু শক্ত হলেই অপারেশন করে ডানা কেটে দেবে। কিন্তু শীত আসছে। প্রতি রাতেই তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। সাগরের পারে দক্ষিন আকাশে বুভুক্ষের মত তাকিয়ে থাকে সে। একদিন আর সামলাতে পারে না। ডানা মেলে দিল দক্ষিন আকাশে। মেঘ ধরতে হবে। এই ডানা জোড়া অনেক দুর্বল। ঘন্টাখানেক ওড়ার পড়ে আর পারলো না সে। সাগরে সলীল সমাধি হয়। তখন স্ত্রী কিংবা পুত্রের জন্যে কোন আক্ষেপ হয় না। তার মনে চাপা উল্লাস। দক্ষিনে না পৌছালেও শেষবারের মত সে ডানা মেলে দিতে পেড়েছে।
গল্পটা খুব সুবিধার না। কিন্তু আমার ভালো লেগেছিল অনুভুতিটার জন্যে। ডানা মেলার আকুতি আকাশ ধরার জন্যে যে আকুতি। পৃথিবীতে ডানা মেলার লোকের অভাব নেই। যাযাবর পাখির মত। সৈয়দ মুজতবা আলীর একটা বইএ উনি আরবের বেদুঈনদের ব্যাপক প্রসংসা করেন। হতে পারে ওরা বাউন্ডুলে, ডাকাত, মানবীক আবেগগুলোর স্থান ওদের কাছে অনেক কম। কিন্তু ওরা স্বাধীন। মরুভুমিই ওদের বিশ্ব। তরল সোনা প্রাপ্তির পর আরবের বাদশাহরা বিভিন্ন মরুভুমীতে সেচ চালু করলো। জায়গায় জায়গায় বালিয়ারীর মাঝে সবুজ ঘাস ফলতে লাগলো। কিন্তু ওগুলো আগাছাই হয়ে রইলো। বেদুইনদের জোর করেও ওদিকে থিতু করা গেলনা। ওরা আজ এখানে তো কাল এখানে। ইউরোপের জীপসীরা আমাদের বেদেদেরই বংশধর। শুনেছি সুলতান মাহমুদের আমলে কাশ্মির থেকে ওরা প্রথমে সারা ভারতবর্ষে পরে আরব হয়ে ইউরোপে পৌছে। ইউরোপিয়ান দেশ গুলোতে লোকেরা ওদেরকে ভালো চোখে দেখত না। ওরা নোংরা থাকে, ঘর বাড়ির বালাই নাই, রোগ জীবানু ছড়ায় (সাত ঘাট ঘুরে চৌদ্দরকম রোগের জীবানু বহন করে) আর সামাজিক সমস্যাও তৈরি করে অনেক। সব সরকারেই চেষ্টা করেছে অনেক। ওদেরকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে নাই। হিটলার সবচে বেশী খড়গ হস্থ ছিলেন, ফলাফল লবডঙ্কা। একসময় ওদের ধরে ধরে আগুনে পুড়িয়ে মারা হত। কিন্তু কিছুতেই ওদেরকে ডেরা বাধতে সেখানো যায়নাই। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতে কিছুদিন আগে ইবনে বতুতার উপরে একটা প্রোগ্রাম দেখলাম। একজন তুর্কি ভদ্রলোক ইবনে বতুতার রুট ফলো করছেন। তাঞ্জানিয়া থেকে মিশরের আল আজহার ইউনিভার্সিটি থেকে মক্কা মদীনা, এরপরে তুর্কী সম্রাজ্য হয়ে ভুমধ্যসাগরের ওপারের দেশগুলো থেকে রুশ সম্রাজ্য, ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, দীল্লীর সুলতানের দরবার, বাংলাদেশের শাহজালাল মাজার, বরিশাল, চট্টগ্রাম হয়ে শ্রীলঙ্কা থেকে থাইল্যান্ড হয়ে চীন। ইবনে বতুতা তাঞ্জানিয়ার লোক ছিলেন। তার বাবা তাকে পাঠিয়েছিলেন আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০ হবার আগেই পায়ে হেটে আরব থেকে তিনি দুইবার হজ্জ করেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির লোভ কিছুই তাকে বাধতে পারে নি। উনি ২১ বছর ধরে পায়ে হেটেছেন পৃথীবীর পথে পথে শুধু মানুষ দেখতে। রাশিয়ার তুন্দ্রা অঞ্চল কিংবা আরবের মরুভুমি, উত্তাল বঙ্গোপসাগর অথবা শান্ত ভু মধ্যসাগর সবই তার কাছে এক ছিল। দিল্লীর উন্মাদ শাহানশাহ সুলতান মাহমুদ তার পান্ডিত্যে এতই মুগ্ধ হলেন সাথে সাথে তাকে সভাসদ করে রেখে দিতে চাইলেন। কিছুতেই যেতে দেন না। সুলতানের হাত থেকে পালাতে তিনি মাটির তলায় একটা গুহাতে চল্লিশদিন একটানা থাকলেন। ৪০দিন একটানা রোজা ছিলেন। সময় কাটাতেন পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করে কিংবা মেডিটেশন করে। পরে সুলতান মাহমুদ বুঝতে পেরেছিলেন এই লোকটা দেখতে হাত পা ওয়ালা মানুষ হলেও আসলে সে একটা ডানা ওয়ালা পরিব্রাজক পাখি। দেশান্তরী পাখিকে তো আটকে রাখা যায় না। অনেক উপঢৌকন সহ তাকে ছেড়ে দিলেন। পাঞ্জাবের কাছে আসতেই উপহার লুটেরা তাকে আক্রমন করে। মাথা ফেটে রক্তে তার চোখ বন্ধ হয়ে আসে। মৃত ভেবে তাকে ফেলে যায়। এমন সময় এক দীর্ঘকায় ভারতী পুরুষ এসে তাকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার কি হয়েছে, আমার নাম দিল শাহ, তুমি আমার সাথে আস আমি তোমাকে রক্ষা করবো। ইবনে বতুতার মনে পড়লো কৈশরে উনি স্বপ্নে এই দৃশ্যটাই দেখেছিলেন। সেই লোক নিঃস্ব অসুস্থ বতুতাকে পাঞ্জাবের এক গ্রামে নিয়ে আসেন। জ্ঞ্যান ফেরার পর তাকে আর কোথাও দেখা গেলনা। সেই গ্রামে অথবা আশে পাশের লোকালয়ে কোথাও এই নামের কোন লোক ছিলনা। ইবনে বতুতা সেখানেও থাকলেন না। ডানা মেলে দিলেন সাগরের দিকে। (উনার ২১ বছরের ভ্রমন নিয়া লিখা অমর পুস্তক রিসালাহ, গুগলে সার্চ দিলেই পাওয়া যায়)।
আজকে রাতে বৃষ্টই থামলে ছাদে দাড়ালাম। সাদা মেঘে আকাশ ভর্তি। অনেক উপরের স্তরে বোধহয় খুব জোড়ে বাতাস বইছে। জানি না মনে হয় সাগরে কোন ডিপ্রেশন তৈরি হচ্ছে। মেঘ গুলো প্রচন্ড গতিতে উত্তরে ছুটছে। মেঘ ছুয়ে দেখার প্রবল আকুতি থেকে এই লিখাটা লিখলাম। খুব ব্যাক্তিগত একটা লিখা। নিজের আবেগ আর অনুভুতি গুলোকে একটূ সাজিয়ে বলতে চাইলাম। আমি অনেকক্ষন মেঘ দেখে নিচে নামলাম। মনের মধ্যে একটা গানের কথাই ঘুরছে, মানুষ আমি আমার কেন পাখির মত মন, তাইরে নাইরে নাইরে গেল সারাটা জীবন।
অনেক দিন আগে একটা বই পড়েছিলাম। দি বার্ডম্যান। রাইটার নাম ধাম কিছু মনে নাই। সায়েন্স ফিকশান। সায়েন্সের পরিমান প্রয়োজনের চেয়েও অনেক অনেক কম আর ফিকশান ভর্তি। একজন ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি ইলেক্ট্রিসিটির কাজ করছিল। ভুলক্রমে তার শরীরের ভেতর দিয়ে হাই ভোল্টেজের কারেন্ট চলে যায়। ভদ্রলোক কয়েকদিন হসপিটালে থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসে। কেউ টের পায়নাই এর ফলে তার ডিএনএতে কঠিন মিউটেশান হয়ে গেছে। যাই হোক বাড়ি ফিরেই সে তার বউএর সাথে মিলিত হয় এবং তার বউ গর্ভবতী হয়। যথাসময়ে তাদের একটা ফুটফুটে ছেলে বাচ্চা হলো। অনিন্দ্য সুন্দর একটা বাচ্চা, একটাই খুত তার ডিএনএ তে বারাবারি রকম মিউটেশানের ফলে সে জন্ম নেয় একজোড়া ডানা নিয়ে। স্বাভাবিক মানুষের তুলনায় তার হাড় অনেক বেশি পাতলা এবং হালকা, শরীর স্তন্যপায়ীদের চেয়ে উষ্ণ। বিজ্ঞানীরা বাচ্চাটাকে আলাদা করে রাখে। একটা নির্জন দ্বীপে একজন বিজ্ঞানীতাকে নিজের ছেলের মত আদর যত্ন বড় করতে থাকে (অনেকটা বেলায়েভ এর এম্ফিবিয়ান ম্যান এর মত)। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার একটা বাজে স্বভাব হলো মাঝে মাঝেই সে ডানা মেলে উড়াল দিত, সাগর পাড়ি দিয়ে মেইনল্যান্ডে চলে আসতো। শহরের পত্রপত্রিকায় অতিকায় একপাখির কথা ফলাও করে প্রচার হতে থাকে। এই সময় মেইনল্যান্ডের একরুপসীর প্রেমে পড়ে বার্ডম্যান। পড়ে পালক বৈজ্ঞানীক বাবার সহায়তায় অপরেশন করে ডানা কেটে ফেলে দেয়। স্বাভাবিক মানুষ হিসাবে বিয়ে করে সুখে ঘর সংসার শুরু করে দেয়। কিছুদিন পরে তার স্ত্রী গর্ভবতী হয়। সে বার বার ভয় পাচ্ছিলো তার ছেলেও কি ডানা নিয়ে জন্ম হবে। কিন্তু বাস্তবে এমন হলোনা। একটা সুস্থ স্বাভাবিক সন্তানের জন্ম হল। তার বৈজ্ঞানিক পালক বাবা হাইপো থিসিস দিল প্রকৃতির একটা ভুলের ফলে অস্বাভাবিকতা নিয়ে বার্ডম্যানের জন্ম। একই ভুল প্রকৃতি দ্বিতিয়বার করবে না।
সব ঠিকঠাক চলছিল। সুন্দরী স্ত্রী, সুস্থ সবল একটা ছেলে। বার্ডম্যান একদিন অবাক হয়ে দেখলো তার পিঠের কাছটা থেকে আবার ডানা গজাচ্ছে। এই ডানাটা আগেরটার মত সবল না, অনেক দুর্বল। তার পালক বাবা ছাড়া আর সবার কাছে ব্যাপারটা গোপন রাখলো সে। পালক বাবা বললো আরেকটু শক্ত হলেই অপারেশন করে ডানা কেটে দেবে। কিন্তু শীত আসছে। প্রতি রাতেই তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। সাগরের পারে দক্ষিন আকাশে বুভুক্ষের মত তাকিয়ে থাকে সে। একদিন আর সামলাতে পারে না। ডানা মেলে দিল দক্ষিন আকাশে। মেঘ ধরতে হবে। এই ডানা জোড়া অনেক দুর্বল। ঘন্টাখানেক ওড়ার পড়ে আর পারলো না সে। সাগরে সলীল সমাধি হয়। তখন স্ত্রী কিংবা পুত্রের জন্যে কোন আক্ষেপ হয় না। তার মনে চাপা উল্লাস। দক্ষিনে না পৌছালেও শেষবারের মত সে ডানা মেলে দিতে পেড়েছে।
গল্পটা খুব সুবিধার না। কিন্তু আমার ভালো লেগেছিল অনুভুতিটার জন্যে। ডানা মেলার আকুতি আকাশ ধরার জন্যে যে আকুতি। পৃথিবীতে ডানা মেলার লোকের অভাব নেই। যাযাবর পাখির মত। সৈয়দ মুজতবা আলীর একটা বইএ উনি আরবের বেদুঈনদের ব্যাপক প্রসংসা করেন। হতে পারে ওরা বাউন্ডুলে, ডাকাত, মানবীক আবেগগুলোর স্থান ওদের কাছে অনেক কম। কিন্তু ওরা স্বাধীন। মরুভুমিই ওদের বিশ্ব। তরল সোনা প্রাপ্তির পর আরবের বাদশাহরা বিভিন্ন মরুভুমীতে সেচ চালু করলো। জায়গায় জায়গায় বালিয়ারীর মাঝে সবুজ ঘাস ফলতে লাগলো। কিন্তু ওগুলো আগাছাই হয়ে রইলো। বেদুইনদের জোর করেও ওদিকে থিতু করা গেলনা। ওরা আজ এখানে তো কাল এখানে। ইউরোপের জীপসীরা আমাদের বেদেদেরই বংশধর। শুনেছি সুলতান মাহমুদের আমলে কাশ্মির থেকে ওরা প্রথমে সারা ভারতবর্ষে পরে আরব হয়ে ইউরোপে পৌছে। ইউরোপিয়ান দেশ গুলোতে লোকেরা ওদেরকে ভালো চোখে দেখত না। ওরা নোংরা থাকে, ঘর বাড়ির বালাই নাই, রোগ জীবানু ছড়ায় (সাত ঘাট ঘুরে চৌদ্দরকম রোগের জীবানু বহন করে) আর সামাজিক সমস্যাও তৈরি করে অনেক। সব সরকারেই চেষ্টা করেছে অনেক। ওদেরকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে নাই। হিটলার সবচে বেশী খড়গ হস্থ ছিলেন, ফলাফল লবডঙ্কা। একসময় ওদের ধরে ধরে আগুনে পুড়িয়ে মারা হত। কিন্তু কিছুতেই ওদেরকে ডেরা বাধতে সেখানো যায়নাই। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতে কিছুদিন আগে ইবনে বতুতার উপরে একটা প্রোগ্রাম দেখলাম। একজন তুর্কি ভদ্রলোক ইবনে বতুতার রুট ফলো করছেন। তাঞ্জানিয়া থেকে মিশরের আল আজহার ইউনিভার্সিটি থেকে মক্কা মদীনা, এরপরে তুর্কী সম্রাজ্য হয়ে ভুমধ্যসাগরের ওপারের দেশগুলো থেকে রুশ সম্রাজ্য, ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, দীল্লীর সুলতানের দরবার, বাংলাদেশের শাহজালাল মাজার, বরিশাল, চট্টগ্রাম হয়ে শ্রীলঙ্কা থেকে থাইল্যান্ড হয়ে চীন। ইবনে বতুতা তাঞ্জানিয়ার লোক ছিলেন। তার বাবা তাকে পাঠিয়েছিলেন আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০ হবার আগেই পায়ে হেটে আরব থেকে তিনি দুইবার হজ্জ করেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির লোভ কিছুই তাকে বাধতে পারে নি। উনি ২১ বছর ধরে পায়ে হেটেছেন পৃথীবীর পথে পথে শুধু মানুষ দেখতে। রাশিয়ার তুন্দ্রা অঞ্চল কিংবা আরবের মরুভুমি, উত্তাল বঙ্গোপসাগর অথবা শান্ত ভু মধ্যসাগর সবই তার কাছে এক ছিল। দিল্লীর উন্মাদ শাহানশাহ সুলতান মাহমুদ তার পান্ডিত্যে এতই মুগ্ধ হলেন সাথে সাথে তাকে সভাসদ করে রেখে দিতে চাইলেন। কিছুতেই যেতে দেন না। সুলতানের হাত থেকে পালাতে তিনি মাটির তলায় একটা গুহাতে চল্লিশদিন একটানা থাকলেন। ৪০দিন একটানা রোজা ছিলেন। সময় কাটাতেন পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করে কিংবা মেডিটেশন করে। পরে সুলতান মাহমুদ বুঝতে পেরেছিলেন এই লোকটা দেখতে হাত পা ওয়ালা মানুষ হলেও আসলে সে একটা ডানা ওয়ালা পরিব্রাজক পাখি। দেশান্তরী পাখিকে তো আটকে রাখা যায় না। অনেক উপঢৌকন সহ তাকে ছেড়ে দিলেন। পাঞ্জাবের কাছে আসতেই উপহার লুটেরা তাকে আক্রমন করে। মাথা ফেটে রক্তে তার চোখ বন্ধ হয়ে আসে। মৃত ভেবে তাকে ফেলে যায়। এমন সময় এক দীর্ঘকায় ভারতী পুরুষ এসে তাকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার কি হয়েছে, আমার নাম দিল শাহ, তুমি আমার সাথে আস আমি তোমাকে রক্ষা করবো। ইবনে বতুতার মনে পড়লো কৈশরে উনি স্বপ্নে এই দৃশ্যটাই দেখেছিলেন। সেই লোক নিঃস্ব অসুস্থ বতুতাকে পাঞ্জাবের এক গ্রামে নিয়ে আসেন। জ্ঞ্যান ফেরার পর তাকে আর কোথাও দেখা গেলনা। সেই গ্রামে অথবা আশে পাশের লোকালয়ে কোথাও এই নামের কোন লোক ছিলনা। ইবনে বতুতা সেখানেও থাকলেন না। ডানা মেলে দিলেন সাগরের দিকে। (উনার ২১ বছরের ভ্রমন নিয়া লিখা অমর পুস্তক রিসালাহ, গুগলে সার্চ দিলেই পাওয়া যায়)।
আজকে রাতে বৃষ্টই থামলে ছাদে দাড়ালাম। সাদা মেঘে আকাশ ভর্তি। অনেক উপরের স্তরে বোধহয় খুব জোড়ে বাতাস বইছে। জানি না মনে হয় সাগরে কোন ডিপ্রেশন তৈরি হচ্ছে। মেঘ গুলো প্রচন্ড গতিতে উত্তরে ছুটছে। মেঘ ছুয়ে দেখার প্রবল আকুতি থেকে এই লিখাটা লিখলাম। খুব ব্যাক্তিগত একটা লিখা। নিজের আবেগ আর অনুভুতি গুলোকে একটূ সাজিয়ে বলতে চাইলাম। আমি অনেকক্ষন মেঘ দেখে নিচে নামলাম। মনের মধ্যে একটা গানের কথাই ঘুরছে, মানুষ আমি আমার কেন পাখির মত মন, তাইরে নাইরে নাইরে গেল সারাটা জীবন।